Masoor dal benefits : মুসুর ডাল খাওয়ার উপকারিতা ।

গোটা বিশ্বজুড়ে মুসুর ডাল একটি জনপ্রিয় খাবার । মুসুর ডাল ভারতীয় উপ মহাদেশের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য । এটি মূলত পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত খাদ্য । বাঙালির রান্না ঘরের অন্যতম সুপরিচিত একটি খাদ্য উপাদান হলো মুসুর ডাল । এই ডালের ইংরেজি নাম red lentil । আমাদের দেশে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক , যারা মুসুর ডাল না হলে ভাত খেতে পারে না । মুসুর ডাল দিয়ে নানা রকমের পুষ্টিকর ও মুখরোচক খাবার তৈরি করা হয় । যেমন – ডালনা , ডালপুরি , পুঁই ডাল , ডালের স্যুপ , ডালের চচ্চড়ি , নিরামিষ ডাল , আম ডাল , ইত্যাদি । মুসুর ডাল দেখতে হালকা লাল বর্ণের এবং এর দানা গুলো খেসারি , কলাই বা বুটের ডালের থেকে ছোট । মসুর ডাল প্রোটিনের আধার বলে একে মাংসের বিকল্প হিসেবেও ধরা হয় ।

মুসুর ডাল শুধু সুস্বাদুই নয় এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে । মুসুর ডাল উচ্চ আমিষসমৃদ্ধ , ফলে মানব দেহে আমিষের অভাব পূরণ করার জন্য যথেষ্ট । মুসুর ডালে বেশ কিছু উপাদান আছে , যা একাধিক রোগ উপশমে উপকারী । মুসুর ডালে রয়েছে খনিজ পদার্থ , ভিটামিন বি-২ , ক্যালসিয়াম , ফাইবার , ভিটামিন এ , ভিটামিন সি , ভিটামিন ই , ম্যাগনেসিয়াম , লৌহ , ফোলেট , আঁশ , প্রোটিন , আমিষ , আয়রন ও শর্করা । এছাড়া এতে পটাশিয়াম , অ্যামিনো অ্যাসিড এবং সেলেনিয়াম থাকে । মুসুর ডাল স্বাস্থ্যের জন্য নানা ভাবে উপকারী । তবে বেশি পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস , হিতে বিপরীত হতে পারে ।

তাই মসুর ডাল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখা দরকার ।

ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে ঃ নিয়মিত খাদ্যতালিকায় এক বাটি মুসুর ডাল রাখতে পারেন । তাতে শরীরে ফাইবারের মাত্রা বাড়বে । ফলে হঠাৎ করে ব্লাড সুগার লেভেল বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আর থাকবে না ।

কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে ঃ মুসুর ডালে উচ্চ মাত্রায় দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে , যা রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে । এটি শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃররোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দিয়ে আপনার ধমনীকে পরিস্কার রাখে ।

হার্টের স্বাস্থ্যের ভালো রাখে ঃ মুসুর ডালে রয়েছে ফাইবার , ফোলেট এবং ম্যাগনেসিয়াম । যা হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে । ফলে কোনও ধরনের হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে । ফলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত হার্ট কর্মক্ষম থাকে । অপর দিকে ম্যাগনেসিয়াম সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের সরবরাহ বাড়িয়ে তোলে ।

মানসিক বিকাশে সাহায্য করে ঃ মুসুর ডালে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান । যেগুলি মস্তিস্কের স্বাস্থ্যকে ত্বারানবিত করতে সাহায্য করে । মসুর ডাল ফোলেটে পূর্ণ হওয়ায় এটি মস্তিস্কের স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ।

হজমে সাহায্য করে ঃ মুসুর ডাল উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ । এটি শরীরে খাদ্যকে সহজে হজম করত পারে এবং অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে তোলে । ফলে বদহজম সহ গ্যাস এবং অম্বলের মতো সমস্যাও কমতে শুরু করে । মুসুর দাল পাচনতন্ত্রকে পরিস্কার করে পেট পরিস্কার রাখতে সাহায্য করে । এছাড়া , কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে অন্ত্রের যে কোনো রকমের সমস্যার সমাধান করতে পারে ।

প্রোটিনের ঘাটতি দূর করে ঃ মুসুর ডালে উপস্থিত ২৬ শতাংশ ক্যালোরি আমাদের শরীরে প্রোটিন হিসেবে প্রবেশ করে । ফলে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় এই উপাদানের ঘাটতি দূর হয় । সেই সঙ্গে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে । তাই যারা মাছ – মাংস খেতে পছন্দ করেন না তারা নিয়মিত খাদ্যতালিকায় এটি রাখতে পারেন ।

রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় ঃ মুসুর ডালের গ্লাইসেমিক সুচক খুব কম থাকে , যা রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশিল করতে সাহায্য করে । তাই যাদের উচ্চ শর্করা আছে , তাদের এটি কমাতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পরিমান মতো মুসুর খাওয়া উচিত ।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ঃ ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ প্রতিরোধে মুসুর ডালের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । এটি ক্যান্সারের সম্ভাব্য উৎসগুলিতে আঘাত করে স্তন , কোলন প্রভৃতি জায়গায় শক্তি প্রেরন করে । মুসুর ডালের পলিফেনোল গুলি ক্যান্সারের সুরক্ষা এবং চিকিৎসায় সাহায্য করে ।

ওজন কমাতে সাহায্য করে ঃ এতে উপস্থিত ফাইবার , কার্বোহাইড্রেট , উপকারি খনিজ , প্রোটিন অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেটকে ভরিয়ে রাখে । ফলে কিছু সময় অন্তর অন্তর খাবার খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায় , তেমনি জাঙ্কফুড খাওয়ার প্রবনতা হ্রাস পায় । ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ওজন কমতে শুরু করে । মুসুর দাল শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে । এছাড়া আয়রনের অন্যতম একটি উৎস হওয়ায় মুসুর ডাল শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে সক্রিয় করে খাবারকে হজমে সাহায্য করে , যার ফলে ওজন হ্রাস পায় ।

চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে ঃ মুসুর ডালে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে , যা চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখে । এতে থাকা ভিটামিন এ এবং বিটা – ক্যারোটিন চোখকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে এবং সামগ্রিক চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে ।

গর্ববতী মায়েদের জন্য উপকারি ঃ এতে একসঙ্গে আয়রন ও ফোলেট দুটিই পাওয়া যায় । এই দুটি উপাদান গর্ভবতী মায়েদের জন্য বেশ প্রয়োজনীয় । প্রতিদিন দুই দিন পর পর মুসুর দাল খেলে ভ্রুনের বিকাশ এবং মাতৃত্বকালীন সময় স্বাস্থ্য ভালো থাকবে আপনার । গর্ভাবস্থায় উচ্চ ফোলেটের পরিমান খুবই উপকারী । কারণ , এটি শিশুর মেরুদণ্ড এবং মস্তিস্কের বিকাশে সাহায্য করে ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top