health tips : হিমোগ্লোবিন কম থাকলে যে সমস্ত খাবার খাওয়া দরকার ।

রক্তের অন্যতম উপাদান হল লোহিত রক্তকণিকা । এই লোহিত রক্তকণিকার মধ্যে একধরনের প্রোটিন থাকে যা অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয় । এই প্রোটিনটিকেই বলা হয় হিমোগ্লোবিন । এই হিমোগ্লোবিনের কারণেই রক্ত লাল হয় । হিমোগ্লোবিনের প্রধান কাজ হল ফুস্ফুস থেকে অক্সিজেন নিয়ে তা শরীরের বিভিন্ন কোষে ছড়িয়ে দেয় । এর ফলে জীবিত কোষগুলো ভালো ভাবে কাজ করতে পারে । এছাড়া হিমোগ্লোবিন কোষ থেকে কার্বন ডাই -অক্সাইড বের করে দেয় । সুতরাং এক কথায় , স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন থাকতেই হবে । রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেন কম পৌঁছয় । রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে নিঃশ্বাসে সমস্যা , দুর্বলতা অনুভব করা , মাথাব্যথা ঘোরানো , হাত – পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে , শ্বাসকষ্ট , ক্লান্তি , অ্যানিমিয়া , পিরিয়ডের অধিক ব্লিডিং হওয়া , হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে ।

হিমোগ্লোবিনের আবার দুটি অংশ রয়েছে — হিম এবং গ্লোবিন । হিম অংশে উপস্থিত থাকে আয়রন । তাই হিমোগ্লোবিনের গঠনে আয়রনের ভূমিকা অপরিহার্য । একজন পুরুষের দেহে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ডেসিলিটার ১৩.৫ থেকে ১৭.৫ গ্রাম । আর নারীদের রক্তে ১২-১৫.৫/১৬ গ্রাম । তবে অনেকেরই রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকে । শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দিলে নানা রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায় । শরীরে আয়রনের অভাব হলে হিমোগ্লোবিনের স্তর কমতে থাকে । কিন্তু প্রাকৃতিক উপায় ও খাওয়া দাওয়ার মাধ্যমে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ানো যায় । সুস্থ জীবনযাপনের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক থাকা প্রয়োজন । তাই এমন কিছু খাবার আছে যা খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক থাকবে ।

আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কি কি খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়তে পারে —-

আয়রন সমৃদ্ধ খাবার ঃ শরীরে আয়রনের ঘাটতি হিমোগ্লোবিনের কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ । হিমোগ্লোবিনের উৎপাদনে আয়রন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । আয়রনের অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যায় । তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত । চিংড়ি , জলপাই , আপেল , বেদানা , খেজুর , কিশমিশ , ডিম , মুরগির লিভার , কুমড়োর বীজ , খেলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ানো যায় ।

লাল মাংস ঃ রক্তে দ্রুত হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে পারে প্রানিজ প্রোটিন । সব ধরণের লাল মাংসই এর অন্যতম উৎস । তাই রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে গরুর মাংস , খাসির মাংস এবং কলিজা খেতে পারেন ।

ডাল জাতীয় খাবার ঃ ছোলা , সয়াবিন ও বিনজাতীয় খাবারে থাকে প্রচুর আয়রন । এই ধরনের খাবার খেলে তা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে কাজ করে । যারা নিরামিষ খাবার পছন্দ করেন তাদের জন্য সয়াবিন একটি জনপ্রিয় খাবার । এই সায়াবিন দিয়ে নানা রকমের খাবারও তৈরি করা যায় ।

সজনে পাতা ঃ তামা , আয়রন , জিঙ্ক , ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ সহ ভিটামিন এ , সি , বি দ্বারা পূর্ণ সজনে পাতা । সজনে পাতা প্রতিদিন ভাতের সাথে খাওয়া যায় । সে ক্ষেত্রে রক্তে হিমগ্লবিনের মাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট বেশি ।

বাদাম ও বীজ ঃ বাদাম । আখরোট , তিসির বীজ এবং কুমড়োর বীজ সহ বাদাম হল পুষ্টিকর খাবার জয়া রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে পারে । এই পুষ্টিকর খাবার গুলি খেলে আয়রনের স্বাস্থ্যকর মাত্রা পাওয়া যায় এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে । এই বাদাম ও বীজগুলিতে আয়রন , ভিটামিন ই এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ প্রচুর পরিমানে রয়েছে ।

বিটরুট ঃ প্রাকৃতিক ভাবেই বিটরুটে প্রচুর পরিমানে আয়রন রয়েছে । এছাড়া , এতে আছে ম্যাগনেসিয়াম , ফসফরাস , ভিটামিন বি১ , বি২ , বি৬ , বি১২ , তামা , ভিটামিন সি । নিয়মিত এই সবজি খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় । একই সঙ্গে রক্তে লোহিত রক্তকণিকা সংখ্যাতেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয় ।

সবুজ শাক সবজি ঃ পালং শাক , কেল এবং ব্রকলির মতো পাতাযুক্ত সবুজ শাক সবজি আয়রন ফোলেট এবং ভিটামিন সি এর চমৎকার উৎস , যা হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য । প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় সবজি রাখা জরুরি । সবুজ শাক সবজি শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য খনিজ ও ভিতামিনের ঘাটতিও দূর করে । তাই সবুজ শাক সবজি আপনার নিয়মিত খবারের তালিকায় রাখুন ।

শস্য জাতীয় খাবার ঃ চাল , গম , বার্লি এবং ওটস জাতীয় খাবার আয়রন সমৃদ্ধ । সেই সঙ্গে এ সবে থাকে পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেটসও । এই শস্য গুলি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ানোর একটি সুবিধাজনক এবং সুস্বাদু উপায় হতে পারে । নিয়মিত লাল চালের ভাত খেতে পারেন । এটি সবার জন্য উপকারী ।

ফল ঃ আপনার খাদ্যতালিকায় ডালিম , আপেল , সাইত্রাস ফল -যেমন কমলা লেবু , আঙ্গুর এবং বেরির মতো ফল রাখতে পারেন । কারণ এই ফলের মধ্যে রয়েছে আয়রন , ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট যা আয়রন শোষণ এবং হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণ সাহায্য করে ।

শুকনো ডুমুর ঃ ডুমুরে র‍্যেছে যথেষ্ট মাত্রায় আয়রন , ম্যাগনেসিয়াম , ভিটামিন এ এবং ফোলেট । প্রতিদিন সকালে শুকোনো ডুমুর খেলে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । এর সাথে শরীরে এনার্জিও থাকে চূড়ান্ত ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top