আমাদের অনেকেরই পছন্দের পানীয় হল চা । এক টুকরো আদা যদি তার সঙ্গে মেশানো হয় তাহলে এক ডিলে দুই পাখি মারার মতো কাজ হয় । বহু শতাব্দী ধরে স্বাস্থ্যকর ও বহু গুনসমৃদ্ধ ভেষজ হিসেবে ধরা হয় । সকালে উঠে এক কাপ চা খেলে একাধিক রোগ – ব্যাধি দূরে থাকে । চা শরীরকে সতেজ আর মনকে প্রশান্ত করে । তবে চায়ের সাথে কয়েক টুকরো আদা দিয়ে বানালে এটি আরও স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে । এই চা প্রতিদিন খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে অনেক ভাবে সুস্থ রাখবে । এটি প্রাচীনকাল থেকে প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে ।

আদা চা এমন উপাদানে সমৃদ্ধ যা গলা ব্যথা এবং সাধারণ সর্দি – কাশির মতো অবস্থার চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে । সেই সাথে খিঁচুনি , বমি বমি ভাব এবং বমির মতো বদহজমের লক্ষণগুলি দূর করতে পারে । আদা চা সাধারণত বেশিরভাগ মানুষের জন্য প্রতিদিন খাওয়া নিরাপদ বলে মনে করা হয় । প্রতিদিন এক কাপ আদা চা আপনার পাচনতন্ত্রকে সাহায্য করতে পারে এবং বুকজ্বালা প্রতিরোধ করতে পারে । আদার প্রাকৃতিক শীতল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ঘামকে উদ্দীপিত করে , ফলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে । আদা চা শরীরের তাপমাত্রার হালকা বৃদ্ধি করতে পারে , যা শরীরের প্রাকৃতিক শীতল প্রক্রিয়াকে প্ররোচিত করে । এই অনন্য ক্ষমতা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত গরমেও সতেজ রাখে আদা ।

আদার অনেক ঔষধি গুন রয়েছে । আদার মধ্যে রয়েছে ভাইরাসরোধী , ব্যাকটেরিয়ারোধী , প্রদাহরোধী উপাদান । আদা ভিটামিন এ , ই , সি এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ভাল উৎস । এর পাশাপাশি আদাতে ফসফরাস , জিঙ্ক , ক্যালসিয়াম , আয়রন , ম্যাগনেসিয়াম , এবং বিটা – ক্যারোটিন পর্যাপ্ত পরিমানে পাওয়া যায় । আদা হজম পদ্ধতি ভালো করে , লিভার পরিস্কার রাখে , রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় , অ্যাজমা ও হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে । সকালে আদা চা খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে ।
জেনে নিন গরম গরম আদা চা খাওয়ার উপকারিতা —-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ঃ আদাতে এমন অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট থাকে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বাড়িয়ে তোলে । যার ফলে আপনাকে কিছু ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে । এছাড়া , আদা চা আমাদের স্ট্রেস অনেক কমিয়ে দেয় । আদাতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি , ম্যাগনেসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ থাকে , যা শরীরের জন্য উপকারী ।
হার্ট ভালো রাখে ঃ নিয়মিত আদা চা খেলে আমাদের হার্ট ভালো থাকতে পারে । আদাতে ভিটামিন , খনিজ , রয়েছে । এটি রক্ত সঞ্চালন- প্রক্রিয়া উন্নত করে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে । আদার রস ধমনিতে চর্বি জমতে বাধা দেয় । ফলে প্রতিদিন আদা চা খেলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটা কমে । গরম চায়ের সাথে আদা মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় ।

শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা কমায় ঃ শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা প্রতিরোধ করে আদা চা । ঠাণ্ডা কাশি কমাতে ভালো কাজ করে এই চা । শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার ঘরোয়া সমাধানে খেয়ে দেখতে পারেন আদা চা । এছাড়া এটি শ্বাসনালী পরিস্কার করতে সাহায্য করে ।
বমি বমি ভাব দূর করে ঃ আদা চায়ের অ্যান্টি – ইমেটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে , যা বমি বমি ভাব এবং বমির লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করে । অম্লতার বিরুদ্ধে আদা চা খুব ভালো লড়তে পারে । ভ্রমণের আগে যদি এক কাপ চা খেয়ে নেন , তাহলে মোশন সিকনেসের কারণে বমি বমি ভাব কমে যায় ।

রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ঃ আদা চায়ে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড , ভিটামিন এবং মিনারেল । এগুলি রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে । এছাড়া আদা চা পেইন কিলার হিসেবে কাজ করে । আদা দিয়ে যদি চা করেন তাহলে এর উপকারিতা বারে কয়েকগুন । কারণ আদায় রয়েছে জীবাণুরোধী উপাদান । রোগ – জীবাণু ঠেকায় ।
মানসিক চাপ কমায় ঃ আদা চা খেলে মানসিক চাপ কমে এবং এটি মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে । এক কাপ আদা চা মানসিক চাপ ও অস্তিরতা কমিয়ে দিতে পারে ।

প্রদাহ কমায় ঃ আদা চায়ে প্রদাহ – বিরোধী যৌগ রয়েছে যা বাত এবং পেশীর ব্যথার মতো সমস্যাগুলি পরিচালনা করতে সাহায্য করে ।
ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকারী ঃ আদায় থাকা জিঞ্জার ও শ্যাগল নামক দুটি উপাদান ক্যান্সার কষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । এই দুই উপাদান দেহ থেকে মৃত কোষকে বের করে দিতে সাহায্য করে । ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধে করতে অনেকটাই সুবিধা হয় । আদা চা নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে । যেমন – অগ্ন্যাশয় , পাকস্থলী , ত্বক এবং কোলন ক্যান্সার ইত্যাদি ।

ওজন কমাতে সাহায্য করে ঃ ওজন কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে আদা চা । গরম আদা চা খেলে অনেকক্ষণ পেট ভর্তি থাকে । তাই আদা চা খেলে অনেকটাই শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে ।
হজম প্রক্রিয়া উন্নত করেঃ আদা হজমপ্রক্রিয়া উন্নত করে সরাসরি হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে । আদা চা খাবারকে ভালো ভাবে হজম করতে সাহায্য করে । খাদ্য শোষণ বাড়ায় । তাই আদা চা খেতে পারেন হজম ভালো করতে । এটি পাচক এনজাইমের উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে , পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে । সেই সঙ্গে পেটের ফোলাভাব , গ্যাস এবং বদহজমের প্রতিরোধ করে । এছাড়া খবারে অরুচি দূর করতে সাহায্য করে ।