ক্যান্সার একটি অত্যন্ত জটিল রোগ । ক্যান্সার একটি বড় রোগ হিসাবে স্বীকৃত , যা প্রতি বছর জুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে । ক্যান্সার হলো শরীরের একটি অংশে অস্বাভাবিক কোষের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন এবং বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট একটি রোগ । এই কোষগুলি রক্ত বা লিস্ফ সিস্টেমের মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পরতে পারে । এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও জিবনযাত্রায় নানা প্রকার অনিয়ম এমন মারন অসুখের দিকে ঠেলে দিতে পারে । তাই ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে জীবনযাপনে নিয়ন্ত্রণ আনা ও ক্ষতিকারক অভ্যাসগুলি থেকে সরে থাকা প্রয়োজন ।

দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস থেকে যেমন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে , তেমনই কিছু খাবার নিয়মিত খেলে , তা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে শরীরকে । গবেষণায় দেখা গেছে যে , ক্যান্সার প্রতিরোধকারী খাবারগুলিতে ভিটামিন , ফাইটোকেমিক্যাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট থাকে যা ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে । যদিও ক্যান্সারের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য কোনও জাদুকারী খাবার নেই , তবে কিছু খাবারে এমন যৌগ রয়েছে যা এই মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে ।
তাহলে জেনে নেওয়া যাক কোন কোন খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে ————–

গাজর ঃ এতে উচ্চ মাত্রার বিটা – ক্যারোটিন থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং স্তন প্রোস্টেট , পাকস্থলী এবং ফুস্ফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য ভাবে কমাতে পারে । গাজরে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন কে , ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট রয়েছে । আর গাজরের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট জাতীয় সবজি ফ্যাট অক্সিডেশনে কোষ উৎপাদন কমায় । এছাড়া গাজরে ফ্যালকারনলও রয়েছে , যা গাজরে পাওয়া একটি প্রাকৃতিক কীটনাশক যা গবেষণায় দেখা গেছে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে ।

টমেটো ঃ টমেটোতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ই , ভিটামিন সি এবং লাইকোপিন নামে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট থাকে । আর টমেটোতে থাকা লাইকোপিন হল একটি লাল রঙের ক্যারোটিনয়েড যার ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এটি প্রোস্টেট , ফুস্ফুস , পাকস্থলী এবং খাদ্যনালীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পরিচিত ।

ব্রকলি ঃ ব্রকলি সাধারণত মাশ- সবুজ ফুলকপি হিসাবে পরিচিত । এটিতে একটি উদ্ভিদ যৌগ সালফোরাফেন রয়েছে যা সাধারনত ক্রুসিফেরাস সবজিতে পাওয়া যায় , যা শক্তিশালী অ্যান্টি – ক্যান্সার বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম । এছাড়া কোলন , মুত্রথলি ও স্তনের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই সবজি বিশেষ কার্যকর ।

দারচিনি ঃ দারচিনি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি সীমাবদ্ধ করতে এবং এমনকি তাদের নির্মূল করতে কার্যকর । বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে , এই মশলা ক্যান্সারের কোষগুলির বিস্তার ঠেকিয়ে রাখতে সাহায্য করে । রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং প্রদাহ দূর করতে দারচিনি বেশ উপকারী । এছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করেত নিয়মিত খাবারে ২ থেকে ৪ গ্রাম দারচিনি রাখা যেতে পারে ।

গ্রিন টি ঃ একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট এবং ক্যান্সার বিরোধী খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে গ্রিন টি । গ্রিন টি ক্যান্সার প্রতিরোধী খাবারের মধ্যে রয়েছে যা লিভার , অগ্ন্যাশয় , খাদ্যনালী , ফুস্ফুস , লিভার , স্তন এবং ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে ।

হলুদ ঃ প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসাবে হেঁশেলের এই মশলার জুড়ি নেই । হ্লুদ কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রুখতেও এই মশলা সাহায্য করে । কারকিউমিল হলুদের মূল যৌগ , এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট , অ্যান্টি – ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি – ক্যান্সার বৈশিষ্ট্য রয়েছে হলুদের । হলুদ ক্যান্সার বিরোধী খাবার এবং ক্যান্সারের নির্দিষ্ট রূপগুলিকে ক্যান্সার কোষ নির্মূল করতে কার্যকর ।

আখরোট ঃ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে আখরোট হল সেরা বাদামগুলির মধ্যে একটি । এতে পেডাকুলাজিন থাকে , যা বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় ইউরোলিথিনে পরিণত হয় , যা স্তন ক্যান্সারের বিকাশ রোধ করে এমন যৌগ । এছাড়া , আখরোটে স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেণ্টও থাকে , যা কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে ।

রসুন ঃ এটি ক্যান্সার প্রতিরোধকারী একটি সুপারস্টার । রসুন লিভার , পাকস্থলী , প্রোস্টেট এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে । এছাড়া , রসুন টিউমার জাতীয় অসুখের প্রবনতা কমাতে সাহায্য করে এবং মূত্রথলির ক্যান্সার ঠেকাতে বেশ কার্যকর রসুন । রান্না করার আগে রসুন কুঁচি করে বা বেটে প্রায় ১০ মিনিট রেখে দিন যাতে এর জৈব সক্রিয় যৌগগুলি সক্রিয় হয় , যা ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে এবং কার্সিনোজেন তৈরি হতে বাঁধা দেয় ।

তিসি বীজ ঃ তিসির বীজ ভিটামিন ই , ফাইবার এবং লিগনান সমৃদ্ধ , যা স্তন , কোলোরেক্টাল , প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে । তিসি বীজ হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে বিশেষভাবে সহায়ক , যে কারনে হরমোন সম্পর্কিত ক্যান্সারের ঝুকি কম থাকে ।