ছোটবেলা থেকে আমাদের পাউরুটিতে মাখন লাগিয়ে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে । স্কুলে যাওয়ার সময় থেকেই এই জলখাবারে অভ্যস্ত আমরা । পাউরুটিতে মাখন লাগালে খেতে যেমন ভালো লাগে, ঠিক তেমনই অনেকক্ষণ পেটও ভরা থাকে । মাখন দেওয়া হয় বেশ কিছু রান্নাতেও । মাখন রান্নায় দিলে , তার স্বাদ কয়েকগুন বেড়ে যায় । আর এই পদগুলি এতটাই মুখরোচক হয় যে একবার স্বাদ নিলে বার বার খেতে ইচ্ছে করে । তাই দিন দিন মাখনের কদর বেড়েই চলেছে । মাখন একটি দুগ্ধজাত পন্য যা তরল দুধ থেকে কঠিন চর্বি আলাদা করে তৈরি করা হয় । এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ”মন্থন” ।

মাখন হল একটি পুষ্টিকর খাবার । মাখন হাজার হাজার বছর ধরে একটি প্রধান পন্য । মাখন দুধ থেকে তৈরি হয় । তাই এই খাবারের যে পুষ্টিগুণ থাকবে , তা বলাই বাহুল্য । মাখন স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি । এটি পুষ্টির ভাণ্ডার । এতে রয়েছে ভিটামিন এ , ভিটামিন ডি , ভিটামিন ই , ক্যালসিয়াম , প্রোটিন , ফাইবার , আয়রন , শর্করা , পটাসিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম । এছাড়া , মাখনে আছে , বিটা – ক্যারোটিন , ফ্যাটি অ্যাসিড , ক্যালোরি , চর্বি । মাঝারি পরিমাণে মাখন নিয়মিত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী । কারণ , এটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বেশ কয়েকটি খনিজ এবং ভিটামিন সরবরাহ করে । মাখনে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে , যা ঘরের তাপমাত্রায় শক্ত হয়ে ওঠে । আপনি যদি মাখন খান তাহলে অনেক রোগ থেকে রক্ষা পাবেন ।

এবার জানা যাক মাখনের কিছু উপকার ——
শরীর সুস্থ রাখে ঃ এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম । মাখন কম পরিমানে প্রতিদিন আপনি খেতেই পারেন । এই খাবারে এমন কিছু উপাদান আছে যা বাড়তে দেয় না ওজন । তাই শরীর সুস্থ রাখতে অবশ্যই মাখন খেতে পারেন । এছাড়া এই খাবার লো ফ্যাট খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখা যেতে পারে ।

হাড় সুস্থ রাখে ঃ মাখনে রয়েছে ভিটামিন ডি , ক্যালসিয়াম । এই ভিটামিন ও খনিজ হাড়ের খেয়াল রাখে । এই ভিটামিন শরীরের জন্য ভালো এবং হাড় গঠনে এই ভিটামিনের জুড়ি মেলা ভার । এই খাবার অষ্টিওপোরোসিস দূর করে দিতে পারে ।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ঃ মাখনে পাওয়া যায় ভিটামিন ডি , ভিটামিন এ- এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান । যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । যার কারণে এড়ানো যায় রোগ ও সংক্রমণ ।

মস্তিস্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ঃ মাখনে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড , যা মস্তিস্কের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । শিশুদের মস্তিস্ক তীক্ষ্ণ করতে তাদের খাদ্যতালিকায় এটি রাখতে পারেন ।
ক্যান্সারের আশঙ্কা কমায় ঃ মাখনে থাকে বিটা – ক্যারোটিন । এই বিটা – ক্যারোটিন শরীরে প্রবেশ করে ভিটামিন এ – তে রূপান্তরিত হয় । আর এই বিটা – ক্যারোটিন ক্যান্সারের আশঙ্কা কয়েকগুন কমায় । শরীরে এই উপাদানটি পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত থাকলে লাং ও প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কয়েকগুন কমায় । অর্থাৎ মাখন ক্যান্সার প্রতিরোধে সিদ্ধহস্ত । তাই এই ধরনের ঘাতক অসুখ থেকে বাঁচতে চাইলে মাখন খান । তবে পরিমানে অল্প ।

চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ঃ এতে আছে ভিটামিন এ । দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য এই ভিটামিনের গুরুত্ব রয়েছে । এছাড়া , এতে রয়েছে বিটা – ক্যারোটিন যা চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী । এই উপাদানটি চোখের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন আটকায় । ফলে বিভিন্ন ধরনের চোখের অসুখ দূরে থাকে ।

শক্তি সরবরাহ করে ঃ মাখন হল শক্তির একটি ঘনীভূত উৎস । যা চর্বি থেকে উচ্চ ক্যালোরি উপাদান সরবরাহ করে । এটি শক্তির মাত্রা বাড়াতে চান এমন ব্যক্তিদের জন্য , বিশেষ করে সক্রিয় ব্যক্তিদের জন্য বা অতিরিক্ত ক্যালোরির প্রয়োজন এমন ব্যক্তিদের জন্য খুব উপকারী । যেমন ক্রিয়াবিদ বা অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের জন্য এটি একটি চমৎকার পছন্দ ।

ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে ঃ মাখনে থাকা ভিটামিন এ ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ । ভিটামিন এ বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে । এছাড়া মাখনে থাকা চর্বি ত্বকের হাইড্রেশন বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং একজিমা এবং সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে । মাখন আলট্রাভায়োলেট রে থেকে বাঁচায় । এটি ত্বকে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে । মাখন খেলে ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা এড়ানো যায় । তাই ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খেতে পারেন মাখন ।
ওজন কমাতে সাহায্য করে ঃ মাখনে থাকা কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড বিপাকীয় হার বৃদ্ধি করে এবং শরীরে সঞ্চিত চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে । মাখনে থাকা চর্বি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরাতে সাহায্য করে , যা সামগ্রিক ক্যালোরি খরচ কমাতে পারে । এবং পরিমিত পরমাণে খেলে তা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ।